১৯৪৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আনসার বাহিনী প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং তৎকালীন পূর্ববাংলা আইন পরিষদে আনসার অ্যাক্ট অনুমোদিত হলে ১৭ জুন ১৯৪৮ সালে তা কার্যকর হয়। তখন থেকে এ বাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সাময়িকভাবে ঢাকার শাহবাগে অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধকালে দেশের সীমান্ত ফাঁড়িগুলোতে আনসারদের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার (মুজিবনগর) এর শপথ গ্রহণ শেষে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে আনসার প্লাটুন কমান্ডার ইয়াদ আলীর নেতৃত্বে ১২ জন আনসার বাহিনীর সদস্য গার্ড অব অনার প্রদান করে। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে আনসার বাহিনীকে বিদ্রোহী আখ্যায়িত করে বিলুপ্ত করা হয়। প্রায় ৪০ হাজার রাইফেল নিয়ে আনসার সদস্যরা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়। যুদ্ধে আনসার বাহিনীর ৯ জন কর্মকর্তা, ৪ জন কর্মচারী ও ৬৫৭ জন আনসারসহ সর্বমোট ৬৭০ জন শহীদ হন। বাহিনীর ১ জন বীর বিক্রম এবং ২ জন বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন। স্বাধীনতা উত্তরকালে ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ঢাকার অদূরে সাভারে আনসার বাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। ১৯৭৬ সালে গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (ভিডিপি) ও ১৯৮০ সালে শহর প্রতিরক্ষা দলের (টিডিপি) সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে এ দুটি বাহিনীই আনসার বাহিনীর সঙ্গে একীভূত হয়। ১৯৭৬ সালে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরে জাতীয় আনসার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (এনএটিসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ সালে এর নামকরণ হয় আনসার ট্রেনিং স্কুল। ১৯৮৬ সালে আনসার ট্রেনিং স্কুলকে আনসার একাডেমিতে উন্নীত করা হয়। ১৯৯৫ সালে এর নামকরণ হয় আনসার-ভিডিপি একাডেমি। বাহিনী বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে আনসার বাহিনী আইন-১৯৯৫ এবং ব্যাটালিয়ন আনসার আইন-১৯৯৫ দ্বারা, যা সংসদ কর্তৃক গৃহীত হলে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভ করে এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ হতে কার্যকর হয়। এ দুটো আইন অনুসারে সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী আনসার বাহিনী একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। ২০২৩ সালের ০১ নভেম্বর মহান জাতীয় সংসদের সর্বশেষ অধিবেশনে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন-২০২৩’ বিল আকারে উত্থাপিত হলে তা সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয় যা এ বাহিনীর জন্য এক যুগান্তকারী অধ্যায়।
১৯৮৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মেহেরপুর পূর্ণাঙ্গ জেলার মর্যাদা লাভ করে। ২০০০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মেহেরপুর সদর উপজেলা বিভক্ত হয়ে মুজিবনগর উপজেলার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় তিনটি উপজেলা রয়েছে∑সদর, গাংনী ও মুজিবনগর। তিনটি উপজেলায় ২০টি ইউনিয়নে ২৭২টি গ্রাম রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ০১টি উপজেলা আনসার কোম্পানি হিসেবে ০৩টি উপজেলা আনসার কোম্পানিতে ৩৪৫ জন সাধারণ আনসার সদস্য রয়েছে। ২০টি ইউনিয়নে ১টি করে ইউনিয়ন আনসার প্লাটুনে ৬৪০ জন সাধারণ আনসার সদস্য রয়েছে। ২২৬টি গ্রামে সর্বমোট ১৩৫৬৮ জন ভিডিপি সদস্যা রয়েছে। ০৩টি উপজেলায় ৯৬ জন উপজেলা প্লাটুনভুক্ত আনসার (মহিলা)সহ সর্বমোট ১৪৬৪৯ জন স্বেচ্ছাসেবী জনবল রয়েছে যাদের মধ্যে ১১৩ জন ভাতাভোগী সদস্য।
মহকুমা থাকাকালীন আনসার ও ভিডিপি’র কার্যক্রম শুরু হয়। তখন মহকুমা প্রধান ছিলেন এর দায়িত্বে যাকে জেলা অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে সম্বোধন করা হতো। পূর্ণাঙ্গ জেলা মর্যাদা পাওয়ার পর আনসার ও ভিডিপিতে বিসিএসের মাধ্যমে অফিসার নিয়োগ শুরু হওয়ায় এই জেলাতেও আনসার ও ভিডিপির নিজস্ব অফিসার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। পরবর্তিতে জেলা কার্যালয় প্রধানের পদটি জেলা কমান্ড্যান্ট করা হয়। বর্তমানে এই অফিসটি ১.৩৮ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত জেলা স্টেডিয়ামের পাশে অবস্থিত। দপ্তর প্রধানের পদবি হচ্ছে জেলা কমান্ড্যান্ট যিনি একজন বিসিএস কর্মকর্তা । উক্ত অফিসের নিয়মিত কাযর্ক্রমের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা, জেলার সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য চাহিদার প্রেক্ষিতে জনবল মোতায়েন, পূজা ও নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে জনবল মোতায়েন, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে জেলার নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়ক কার্যক্রম এবং সদর দপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক অন্যান্য কার্যক্রম । উক্ত কার্যালয়ের অধীনে প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা কার্যালয় এবং প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত কক্ষে ইউনিয়ন পর্যায়ের কার্যক্রমগুলো পরিচালিত হয়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস